Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

বিশেষ অর্জন

আগানগর ইউনিয়নের বিশেষ অর্জন
মানুষের সমাজবদ্ধতার সাথে ভাষার উদ্ভব জড়িত, কারণ পরস্পরের কাছে মনের ভাব ব্যক্ত করার জন্যই ভাষার আবশ্যিকতা। সংস্কৃতির সাথে রয়েছে ভাষার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। আঞ্চলিক ভাষা বিকশিত হয় কোন নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। আগানগর সাংস্কৃতিক অঞ্চলে স্বতন্ত্র হয়েছে পূর্ব দিকে রয়েছে মেঘনা নদী এই নদী ঢাকা ও বি-বাড়িয়া জেলাকে দ্বীখন্ডিত করেছে। পশ্চিম দিকে রয়েছ শিমুলকান্দি ইউনিয়ন উত্তর দিকে শ্রীনগর ইউনিয়ন, দক্ষিণ দিকে মেঘনা নদী। কিছু কিছু ভাষা অমিল থাকার পরও এই সাংস্কৃতিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা, প্রবাদ প্রবচন ও লোকগাঁথায় বেশকিছু মিল পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ মেলামেশায় জাতি যেমন সংকর হয়ে ওঠে মানুষে মানুষে মেলামেশায় ভাষাও তেমনি সংকর হয়ে ওঠে এবং এভাবেই উপভাষার চরিত্র কখনও বিপন্ন হয়ে যায়। আগানগর ইউনিয়ন সাংস্কৃতিক অঞ্চলটি সে অর্থে অনেকটাই নিরাপদ এবং এই নিরাপত্তাই এ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্য।
 

ইউনিয়নের আঞ্চলিক/স্থানীয়ভাষা লগে লগে, আইয়া পর, গেছে গা, কই গেছিলে, তোরে না কইছি, আমরা বাড়িতে যাইছ, কার লাইগ্যা।
 

প্রচলিত বুলি, বচন, কৌতুক, জোকস, প্রবাদবাক্য
ধারায় নারা বাইরায়, চৌদ্দ পুরুষ তার পেন্দে দৌড়ায়
[পূর্বপুরুষদের কাজ/অভ্যাস এর প্রভাব পরবর্তীদের মধ্যে ও দীর্ঘদিন বহাল থাকে।]
এক পয়সার ঋণের লাইগ্যা চান্দেরে খাইল
[চন্দ্র্রগ্রহনের বেলায় প্রযোজ্য, বলা হতো যে, সূর্য এক পয়সা ঋনের জন্য চন্দ্রকে গ্রাস করছে।]
শিলে পাডায় ঘষাঘষি, মইচের জীবন শেষ
নাইড়্যা মাথায় টিনটিন, এক পয়সার তেলের টিন
[ছোট ছেলের মেয়ের মাথা ন্যাড়া করলে, তার বন্ধুরা তাকে খ্যাপানো জন্য বলে থাকে]
আইলসার ডাহুর [অত্যন্ত অলস], বলদ [বোকা অর্থে], লুহুনদরা [অলস], বাপের বেডা [সাহসী], চোপা করা [মুখে মুখে তর্ক করা] ইত্যাদি।
 

লোকসংস্কৃতি, লোকউৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথাঃ লোক সংস্কৃতি, লোক উৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথার দিক দিয়ে আগানগর ইউনিয়ন হলো প্রসিদ্ধ। রয়েছে কাজলরেখা, সফর মুল্লুক, রুপবান,  ইত্যাদি পালা।
তাছাড়া যাত্রাগান, গ্রামীণ কাহিনীর উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত নাটক ও যাত্রা আগানগর ইউনিয়নের ঐতিহ্য। আগানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত লোকসঙ্গীতগুলোর অন্যতম হলো বাউলগান, ভাটিয়ালী, কিস্সাপালা, কবিগান, কীর্তন, ঘাটুগান, জারিগান, সারিগান, মুর্শিদী, যাত্রা, বিয়ের গান, মেয়েলীগান, বিচ্ছেদী গান, বারমাসী, পুঁথিগান, পালকির গান, ধানকাটার গান, ধানভানার গান, হাইট্টারা গান, গাইনের গীত, বৃষ্টির গান, ধোয়া গান, শিবগৌরীর নৃত্য গীত, গাজীর গান, পটগান  ইত্যাদি ।
 

প্রধান প্রধান উৎসবঃ নবান্ন: আগানগর ইউনিয়নে সুদূর অতীত হতে নতুন ধান উঠা উপলক্ষ্যে নবান্ন উৎসব প্রতি ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছে। অগ্রহায়ন মাসে নতুন ফসল ঘরে উঠানোর পর ঐতিহ্যবাহী খাদ্য পরিবেশনের নামই হলো নবান্ন। নবান্নে পিঠা পার্বণের সাথে সাথে পুরনো কিচ্ছা, কাহিনী, গীত, জারি এই সবকে উপজীব্য করে চলে রাত্রীকালীন গানের আসর।
 

পিঠা উৎসব: অগ্রহায়ন পৌষের শীতে নবান্নের পিঠা-মিষ্টি উৎসবের সময় আগানগর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। নানা ধরনের পিঠার মধ্যে রয়েছে তেলের পিঠা, মেরা পিঠা, পাটি সাপটা, মসলা পিঠা, পুলি পিঠা, গুলগুল্যা পিঠা, দই পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধ কলা পিঠা, চিতল পিঠা, খেজুর রসের পিঠা, নকসী পিঠা ইত্যাদি।
 

নববর্ষ ও মেলা: আগানগর ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে এখনও শহরের মতো বর্ষবরণের প্রচলন শুরু না হলেও অতিপ্রাচীনকাল হতে এখানে বিরল অথচ লোকজ ঐতিহ্যের দাবী নিয়ে দীপশিখা জ্বালিয়ে বাংলা বর্ষ বিদায়ের এক নীরব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হতো। মেলা উপলক্ষে মহিলারা বাপের বাড়ীতে নাইয়র আসত এবং মেলায় এসে ছোট বাচ্চারা খেলনা, বাঁশি, কিনতো। মেলায় বিভিন্ন রকম সার্কাস, দোলনা খেলা চলতো।
 

যাত্রাগান: সাধারনত শীতকালে প্রাচীন লোককাহিনীর উপর ভিত্তি করে যাত্রার আয়োজন করা হয়। এই সব যাত্রা এবং যাত্রাগান কখনো কখনো রাতব্যাপী হয়ে থাকে। যেসব কাহিনী/ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যাত্রা হয় তম্মধ্যে কাজল রেখা, সফর মুল্লক, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং স্থানীয় ভাবে রচিত বিভিন্ন কাহিনী/ উপাখ্যান অন্যতম।
 

পালাগান: বর্তমানে পালাগানের আয়োজন হয় না বললেই চলে। তবে পূর্বে বিভিন্ন স্থানে পালাগানের আয়োজন করা হতো।
 

নৌকা বাইচ: বর্ষাকালে নদী বা বড় বড় খালগুলি যখন পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন বিভিন্ন স্থানে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতার আকারে আয়োজিত এসব নৌকা বাইচ অনুষ্ঠান স্থানীয় প্রশাসন এর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।
 

বিয়ে/ জম্মদিন/ বিবাহবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা সংক্রান্তঃ
বাংলাদেশের অন্যান্য ইউনিয়নের মতোই সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই আগানগর  ইউনিয়নে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে জম্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী পালনের প্রচলন আগে তেমন না থাকলেও ইদানিং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মাঝে তা ব্যাপক ভাবে দেখা যাচ্ছে। বিয়েতে বরের পক্ষ থেকে বরযাত্রী যায় কনের বাড়ীতে। কনের বাড়ীতে বরযাত্রীদের গায়ে রং ছিটিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ বহুদিনের, এই নিয়ে ঝামেলাও কম হয় না। বরপক্ষের আনা জিনিস পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি, সমালোচনা, রসাত্মক আলোচনা চলে কনে পক্ষের লোকজনের মধ্যে। খাওয়া-দাওয়া ও বিয়ে শেষে কনেকে বরের বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়, সেখানে মহিলারা অপেক্ষা করেন ধান, দূর্বা, চিনি ইত্যাদি নিয়ে কনেকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য। পরের দিন বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত দুই-তিন দিন পর বর ও কনে মেয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যায়, যাকে ‘ফিরানী’ বলা হয়। কয়েক দিন সেখানে থেকে পুণরায় বর নিজের বাড়ীতে ফিরে আসেন।
 

প্রচলিত খেলাধুলা, খেলাধুলার বিবর্তন
পূর্বে এ অঞ্চলে প্রধান আমোদ প্রমোদ ছিল ঘুড়ি উড়ানো, নাচগান, লীলা ও তাস খেলা, নৌকাবিহার, পাশা খেলা, বানর লম্ফ, মোরগ লড়াই, দাড়িয়াবান্দা, কাবাডি, ক্যারম, গোল্লাছুট, দাবা, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, বৌচি ইত্যাদি। গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্দা, কাবাডি, মোরগ লড়াই ইত্যাদি খেলার স্থান ক্রমে দখল করে নিয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলা। প্রযুক্তির উন্নতির দরুন টেলিভিশনের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ফুটবল ক্রিকেট খেলা গ্রাম ও শহরে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই আজ বেশিরভাগ মাঠই দাড়িয়াবান্দা, হা-ডু-ডু, বৌচি, গোল্লাছুট ইত্যাদির পরিবর্তে ক্রিকেট বা ফুটবল দখল করে নিয়েছে। তবে গ্রামে এখন ও বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে গোল্লাছুট, বৌচি ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে।
 

খাদ্যভ্যাস, মিষ্টি-মিঠাই-পিঠা, স্থানীয়বিশেষখাবারঃ ইউনিয়নের গ্রামীণ উৎসব ও মেলায় নানা ধরনের ও বৈচিত্রে ভরপুর সৌখিন খাদ্যবস্তু পরিবেশন করতে দেখা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে মিষ্টি, নিমকি, খাস্তা, মুড়ির মোয়া, চিঁড়ার মোয়া, খৈ এর মোয়া, তিলের খাজা, কদমা, গজা, কটকটি, হাওয়াই মিঠাই ইত্যাদি। সকাল-এ ভাত/খিচুরী/রুটি, দুপুরে ও রাতে ভাত খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। তবে ‘জাউ’ এঅঞ্চলের একটি জনপ্রিয় খাবার বিশেষ করে অস্বচ্ছল বা গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে। মিষ্টির মধ্যে রয়েছে, ডুমরাকান্দা গোপীনাথ মোদকে মালাইকারী, কালোজাম, রসমালাই,  এবং গুড়ের সন্দেশ ইত্যাদি।
 

জাতিগত/ আঞ্চলিক/ ভৌগোলিক বিশেষ অনুষ্ঠানমালাঃ এ ইউনিয়নে বসবাসরত  বিভিন্ন লোকজন তাদেরনিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা পালন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতন এ ইউনিয়নের লোকজন বৈশাখী মেলা, ঈদ উৎসব, দূর্গাপূজাসহ অন্যান্য উৎসব জাকজমকের সাথে উদযাপন করে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, নির্মল ভ্রাতৃত্ববোধ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যকে জানার স্পৃহা ও আগ্রহভরা অংশগ্রহণ।
 

সামাজিকরীতিনীতি/ সংস্কার/ কুসংস্কার/ প্রচলিত ধ্যানধারণাঃ
অতিথিপরায়ণতা এ ইউনিয়নের একটি উল্লেখযোগ্য রীতি। ধনী গরীব নির্বিশেষে আপ্যায়ন বা মেহমানদারীর রীতিটি সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় উৎসবসমূহে আত্মীয়দের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া, নতুন কাপড় পরিধান করা, ভাল খাবার তৈরী করা ও অপরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো, ঘনিষ্ঠদের নতুন কাপড় উপহার দেয়া ইত্যাদি রীতি অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও প্রচলিত। মুসলিম মহিলাদের মধ্যে পর্দা পালনের রেওয়াজ বিদ্যমান, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অধিকহারে।  সব পরিবারই পুরুষ শাসিত। প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিশেষ করে গ্রামে পুরুষেরা আয় রোজগার ব্যস্ত থাকেন আর মহিলারা ঘরের কাজকর্ম সামলান।
 

বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, যৌতুক, নারীনির্যাতনসংক্রান্তঃ শহরাঞ্চলে এবং শিক্ষিতদের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রচলন নেই বললেই চলে। তবে দরিদ্র এবং গ্রামীণ পরিবারে এখনও বাল্য বিবাহ ঘটতে দেখা যায়। সামাজিক ভাবে বহুবিবাহ প্রশংসনীয় নয়। যৌতুক সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি- একথা বলা যায় তবে তার পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। কালের আবর্তে যৌতুকের পণ্যে পরিবর্তন এসেছে। সাইকেল, টিভি, রেডিও এর পরিবর্তে এখন জমি, চাকুরীর জন্য ঘুষের টাকা, বরের বিদেশ যেতে প্রয়োজনীয় টাকা দাবী করা হয় যা যৌতুকেরই বিবর্তন।।

ইউনিয়নের পূর্বের অবস্থান এবং বর্তমান অবস্থান: আগানগর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলনা বর্তমান সরকারের অবধানে এখন ১০০% বিদ্যুতায়িত এই ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল: বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল সমগ্র দেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার এখন আজ তা বাস্তবায়ীত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার চালু রয়েছে যা একটি দৃষ্টান্ত। এই ডিজিটাল সেন্টার থেকে দৈনিক জনগণ সরকারী বেসরকারী সহ আইটি সেবা নিচ্ছে দিনরাত।